শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম:
এক দফা দাবিতে নার্সদের পতাকা মিছিল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে নেপালের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ বিসিক মুদ্রণ শিল্পনগরী স্থাপন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রেখেছে বিজিবি সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী দলকে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার ফুলেল শুভেচ্ছা বাড়ছে পদ্মার পানি, বন্যার আতঙ্ক রাজশাহীতে টেক্সটাইল করপোরেশন পরিদর্শন করলেন বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা দূষণ নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে বিশ্বব্যাংক : পরিবেশ উপদেষ্টা “যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার ঝটিকা সফর” স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করার আহ্বান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াতের

হিমাগারে মজুত করে কৃত্রিম সংকট, শিবগঞ্জে বেড়েছে আলুর দাম

শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি
পেঁয়াজ, চাল, ডাল, ডিমসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে যখন দিশেহারা মানুষ, তখন নতুন করে বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে আলু। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, হিমাগারে আলু মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছেন বড় ব্যবসায়ীরা। ভোক্তাদের দাবি, প্রশাসনের তদারকির অভাবে বাড়ছে আলুর দাম।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গতকাল বুধবার উপজেলার খুচরা বাজারগুলোতে প্রতি কেজি কার্ডিনাল জাতের আলু বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা, দুই সপ্তাহ আগে যা বিক্রি হয়েছিল ৩৫ টাকা কেজিতে।

এসব বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, বড় ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে আলু বিক্রি করছেন না, যার ফলে সরবরাহ কমে গিয়ে দাম বেড়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে মোকামতলা বাজারের আলু ব্যবসায়ী আব্দুল বারী জানান, ‘দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি আলু ৩৫ টাকায় বিক্রি করেছি। বর্তমানে দাম বাড়ায় সেই আলু ৪৫ টাকায় বিক্রি করছি।’

মহাস্থান বাজারের খুচরা আলু ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম জানান, ‘হিমাগারে গেলে ব্যবসায়ীরা আলুই বিক্রি করতে চান না। নিজেরা ইচ্ছেমতো দাম হেঁকে বসে থাকেন। আমরা বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনছি।’

উথুলি বাজারে আসা শিবগঞ্জ পৌরসভার বেড়াবালা পাইকপাড়া গ্রামের দিনমজুর এনামুল হক বলেন, ‘বাজারে এলে চোখে পানি আসে। সব জিনিসের দাম বেশি। ৫০০ টাকার বাজার করলে দুই দিন চালাতে পারি না। এখন আবার আলুর দামও বেড়েছে। আমরা কীভাবে বাঁচব?’

মোকামতলা হাটে বাজার করতে আসা মাদ্রাসাশিক্ষক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘হিমাগার ও বাজারগুলোতে প্রশাসন তদারকি না করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এক দিনও প্রশাসনকে বাজার মনিটরিং করতে দেখলাম না। এ অবস্থায় বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে।’

শিবগঞ্জ উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পলাশ কুমার সরকার জানান, গত মৌসুমে শিবগঞ্জের ১৮ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এসব জমিতে উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন আলু। উপজেলায় ভোক্তা পর্যায়ে এক বছরে আলুর চাহিদা ১৫ হাজার ১৮০ মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত আলু দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিদেশে বিক্রি করেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বেশির ভাগ কৃষক আলু উৎপাদনের পর মৌসুমেই বিক্রি করে দেন। আর ব্যবসায়ীরা তা কিনে হিমাগারে মজুত করেন। বর্তমানে কৃষকের ঘরে কোনো আলুর মজুত নেই। তাই, হিমাগার থেকে সীমিত সরবরাহকৃত আলু এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি অফিস জানায়, বর্তমানে এই উপজেলায় সর্বমোট ১৫টি হিমাগার আছে। মৌসুমে এসব হিমাগারে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫১৭ মেট্রিক টন আলু মজুত করা হয়েছিল। বিক্রির পর বর্তমানে ৮২ হাজার ১০০ মেট্রিক টন আলু হিমাগারে মজুত আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার বেশির ভাগ হিমাগারে আলু কেনাবেচা বন্ধ রয়েছে। দু-একজন প্রান্তিক কৃষক তাঁদের সংরক্ষণে থাকা সামান্য পরিমাণ আলু খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। আলুর বাজার আরও বাড়তে পারে এই আশায় হিমাগারে মজুত করা আলু বিক্রি করছেন না বড় ব্যবসায়ীরা।

গত মঙ্গল ও বুধবার সরেজমিন শিবগঞ্জের আরএন্ডআর কোল্ড স্টোরেজ, সাহা হিমাগার, হিমাদ্রি লিমিটেডসহ বেশ কয়েকটি হিমাগারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অলস সময় কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আলু বিক্রি হচ্ছে খুব কম।

এবার হিমাগার ভাড়াসহ ৬০ কেজির প্রতি বস্তা অ্যাস্টেরিক, ডায়মন্ড ও কার্ডিনাল আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করতে খরচ হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। বর্তমানে হিমাগারের সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকায়। আর দেশি পাকড়ি জাতের আলু হিমাগার ভাড়াসহ বস্তাপ্রতি খরচ হয়েছে দেড় হাজার টাকা, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৫০ টাকায়। সংরক্ষণের মাত্র চার মাসের ব্যবধানে প্রতি বস্তা আলুতে ব্যবসায়ীদের মুনাফা হচ্ছে প্রায় ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা।

শিবগঞ্জের আলু ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েক বছর যাবৎ হিমাগারে আলু রেখে লোকসান হয়েছে। তখন তো কোনো সাংবাদিককে নিউজ করতে দেখিনি। কেউ খোঁজও নিতে আসেনি। বাজারে অনেক সবজির দাম বেড়েছে। সে কারণে আলুর দামও বেড়েছে।’

মোকামতলা কাশিপুর আরএন্ডআর পটেটো কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই হিমাগারে শুরুতে ২ লাখ ৬৬ হাজার বস্তা আলু মজুত ছিল। এর মধ্যে বর্তমানে ১ লাখ ২০ হাজার বস্তা আলু মজুত আছে।

তিনি বলেন, বেশির ভাগ হিমাগারেই কৃষকের চেয়ে ব্যবসায়ীরা আলু বেশি মজুত করেন। গত তিন বছর আলুতে লোকসান হয়েছে। এবার বাজার ভালো হওয়ায় ব্যবসায়ীরা লাভ করতে পারছেন। দাম আরও বাড়ার আশায় অনেকে আলু বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়ানোর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখব। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2017 ithostseba.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com
Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com